টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভুল রক্ত পুশ করার ৭ দিন পর আব্দুর রউফ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
বুধবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া আব্দুর রউফ দেলদুয়ার উপজেলার কৌপাখী গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, আব্দুর রউফকে বুধবার টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্য স্বজনদের জানান চিকিৎসক। এরপর স্বজনরা ‘ও’ পজেটিভ রক্তের ডোনার খুঁজে হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে উপস্থিত করেন। ডোনার এবং রোগীর রক্ত ক্রস ম্যাচিং করে হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট জানান রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ পজেটিভ।
ওই দিন সন্ধ্যায় ‘এবি’ পজেটিভ রক্তের ডোনার এনে উপস্থিত করলে ল্যাব টেকনোলজিস্ট রক্ত সংগ্রহ করেন। সন্ধ্যার পর রোগীর শরীরে ‘এবি’ পজেটিভ রক্ত পুশ করেন চিকিৎসক। পুশ হওয়ার পরপরই রোগী নানা ধরনের উপসর্গের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসক রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দেন।
এরপরে রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানের চিকিৎসক রোগীর হিমোগ্লোবিন কম দেখে তাৎক্ষণিক রক্ত দেওয়ার জন্য স্বজনদের রক্তের ডোনার আনতে বলেন। ‘এবি’ পজেটিভ রক্তের ডোনার সেখানে উপস্থিত করলে তাদের রক্ত ক্রস ম্যাচিংয়ে দেখা যায় রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ ।
রোগীর ছেলে উজ্জল বলেন, রক্তদাতা ও রোগীর রক্তের ক্রস ম্যাচিংয়ে রোগীর ‘ও’ পজেটিভ না হয়ে ‘এবি’ পজেটিভ বলেছেন জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জু। যার ফলে ‘ও’ পজেটিভ রক্তদাতা চলে যান। এর পরবর্তীতে রোগীর জরুরি রক্ত প্রয়োজন হওয়ায় ‘এবি’ পজেটিভ রক্তদাতা এনে ক্রস ম্যাচিং করে রোগীকে ‘এবি’ পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়। এরপর প্রায় ৪০ মিনিটের মধ্যে রোগীর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক চিকিৎসক রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রক্ত দেওয়া লাগবে বলে রক্তের ডোনার আনতে বলেন। ডোনার এনে ক্রস ম্যাচিংয়ে জানতে পারি আমার বাবার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিনোভা হসপিটাল, এশিয়া ক্লিনিক, আল মোহনা হসপিটাল ও ক্লিনিকসহ আরো কয়েকটি ক্লিনিকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করানো হয়। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এশিয়া হসপিটাল এবং আল মোহনা হসপিটালে ‘ও’ পজেটিভ রিপোর্ট দেয়।
অপরদিকে, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং মেডিনোভা ক্লিনিক ‘এবি’ পজেটিভ রিপোর্ট দেয়।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জু বলেন, আমি বারবার রক্তের গ্রুপ ম্যাচিং করেছি। প্রতিবারই ‘এবি’ পজেটিভ এসেছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়টির আমরা দায় এড়াতে পারি না। তবে এটি ছিল পুরোপুরি হাসপাতালের টেকনোলজিস্টের ত্রুটি। তবে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করায় এখানে রক্তের ম্যাচিং বিষয়ে একজন ডাক্তার যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে অন্যত্র নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল।