টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
গতকাল রাতে নির্জন আমাকে কল দিয়ে বললো আপু অক্টোবরের ১ তারিখে আমার জন্মদিন, সেদিন আমি ছুটিতে আসবো তখন আমাকে কি উপহার দিবা? তখন আমি জানতাম যে নির্জন অনেক পশুপাখি পছন্দ করতেন তাই আমি নির্জন কে বলেছিলাম যে জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করবো। নিজর্ন আমার এক মাত্র ভাই ছিলো। আমরা দুই ভাই বোন বাবা মা কে নিয়ে খুবই সুখি ভাবে সংসার করছিলাম। কথা গুলো বলছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতী প্রতিরোধ অভিযানে নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি।
আজ (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্জনের বাড়িতে গেলে তার বোন প্রতিনিধির কাছে কান্না জড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলেন।
এসময় সূচি আরও বলেন,আমার ভাই ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদন্নোতি পেত সে জন্য সে ভালো ভাবে কাজ শুরু করেছিলো। আমরা আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল ফোন করে আমাকে বললো যে আপু আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে আমি মাংস পিঠা খাব আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না আমার ভাইটাকে। আমার ভাই বললো যে আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো অভিযান শেষ করে আমি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবনি চিন্তা করোনা। আর আমার ভাই কল দিলো না।
নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান বলেন,আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বললো মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো শেষ করে তারপর কল দিবনি, আমার ছেলে আর কল দিলো না, আমার ছেলে হত্যার বিচার দাবী করছি।
নির্জনের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, সকালে কল আসে নির্জন মারা গেছে আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না কি থেকে কি হয়ে গেলাে। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিছে আমি আমার ছেলের হত্যা কারীদের বিচার দাবী করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিলো আমার ছেলে সেও এখন হারিয়ে গেলো।
নির্জনের চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন,ছোট কাল থেকেই নির্জন খুবই শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ। কখনো কারো সাথে বেয়াদবি বা খারাপ আচরণ করতে দেখি নাই।
আজ ভোরে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকার সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন নিহত হয়। তার মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ শুনে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।পরিবারের অন্য সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে তার বাড়িতে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা।
নিহত সেনা কর্মকর্তার মা ও স্বজনরা জানান, পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে গত ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন। পরিবারের লোকজন সেনা কর্মকর্তা নির্ঝরের হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেন।
লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের মরদেহ আজ বিকেলে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। পরে জানাজার নামাজ শেষে সামরিক মর্যাদায় মরহুমের মরদেহ দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য ;আজ ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দ অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনকে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।