খবরযোগ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে লন্ডনে হিসাব বহির্ভূত ফ্ল্যাট মালিকানার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাজ্য প্রশাসন। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফ টিউলিপকে এই ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বার্তাসংস্থা ফাইনানশিয়াল টাইমস তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসের তথ্য অনুযায়ি লন্ডনের কিংস ক্রসের দুই বেডরুমের এই ফ্ল্যাট ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডের (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) বিনিময়ে কেনেন আব্দুল মোতালিফ।
২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি কোনো অর্থ বিনিময় ছাড়াই টিউলিপের নামে হস্তানর করা হয়।
তবে টিউলিপের মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ফ্ল্যাট অথবা অন্য যেকোনো সম্পদের মালিকানা থাকার সঙ্গে তার আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের কোনো যোগসংযোগ নেই।’
এদিকে ২০০১ সালে এই আলোচিত ফ্ল্যাট কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আব্দুল মোতালিফ। তবে টিউলিপকে মালিকানা হস্তান্তরের কারণ জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানান, অতীতে টিউলিপের পরিবারের দেওয়া আর্থিক সহায়তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মোতালিফ এই ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন।
বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোলের তথ্য থেকে ২০০৪ সালের পর টিউলিপ ও তার সহদোররা এই ফ্ল্যাটে থেকেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদ আহরণের অভিযোগ আরও দৃঢ় হলো।
তবে টিউলিপ ও আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত লেবার পার্টির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য শাখার ‘লবিং ইউনিট অ্যান্ড ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি টিম’-এ সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
তার নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
বিজয়ী সভায় আওয়ামী লীগের প্রতি সরাসরি সমর্থন প্রকাশ করে লন্ডনে দলটির সমর্থকদের উদ্দেশ্যে টিউলিপ বলেন, ‘আপনারা না থাকলে আমি যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারতাম না।’
যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থপাচার রোধের দায়িত্বে আসীন খোদ টিউলিপের বিরুদ্ধেই জালিয়াতির অভিযোগ উঠায় তীব্র সমালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশটির প্রশাসনে।
বর্তমানে কিংস ক্রসের এই ফ্ল্যাটে অবস্থান না করলেও ফ্ল্যাটের ভাড়াবাবদ বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।
এদিকে অভিযোগ সত্ত্বেও টিউলিপের ওপর ভরসা রাখছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। টিউলিপ কোনো অন্যায় করেননি বলে বিশ্বাস তার।
বর্তমানে টিউলিপ প্রায় ২ মিলিয়ন পাউন্ড ভাড়ার একটি ফ্ল্যাটে বাস করছেন।
জানা গেছে, ফ্ল্যাটটি আওয়ামী লীগের এক নির্বাহী সদস্যের মালিকানাধীন।
সূত্র: দ্য ফাইনানশিয়াল টাইমস।