খবরযোগ ডেস্ক: গাজার উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ সচল হাসপাতাল কামাল আদওয়ান দখলে নিয়ে এর বড় অংশ পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া সেখানে থাকা শত শত মানুষকে স্থানান্তরে বাধ্যও করেছে তারা। এদিকে গাজার অন্য এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে একটি বাড়িতেই নিহত হয়েছেন ১৫ জন।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এসব তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরের বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত এই হাসপাতালের ভেতরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হাসপাতালের রোগীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বুরশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হাসপাতালটি দখলে নিয়ে এটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি বিবৃতিতে হাসপাতালটিতে অভিযান চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং দাবি করেছে এটি ‘উত্তর গাজার হামাসের সন্ত্রাসী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।’
তবে হামাস এই দাবি ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করে জানায়, হাসপাতালে কোনো যোদ্ধা ছিল না।
গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু এল-রিশ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সার্জারি বিভাগ, ল্যাবরেটরি এবং একটি স্টোরহাউসে আগুন দিয়েছে।
পরে আগুন হাসপাতালের পুরো কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়ে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল কঠোর অবরোধের মুখোমুখি ছিল এবং অপারেশন বিভাগ, ল্যাবরেটরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট, অ্যাম্বুলেন্স বিভাগ ও স্টোরহাউস সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
সব জেনারেটর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দখলদার বাহিনী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রোগীদের এবং আহতদের ইন্দোনেশীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করছে। যেখানে চিকিৎসা সরঞ্জাম, পানি, ওষুধ এবং বিদ্যুৎ পর্যন্ত নেই।
ইসরায়েলি বাহিনী কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে ৩৫০ জনকে কাছাকাছি একটি স্কুলে স্থানান্তরে বাধ্য করেছে। যাদের মধ্যে ৭৫ জন রোগী, তাদের সঙ্গী এবং ১৮৫ জন মেডিকেল স্টাফ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কেন্দ্রীয় গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, শুক্রবার কামাল আদওয়ান থেকে খুবই কম তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের ভেতরে ইসরায়েলি সেনারা তল্লাশি চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে ইসরায়েলি হামলায় পাঁচজন মেডিকেল স্টাফ নিহত হন। যার মধ্যে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও ছিলেন।
হামাস এক বিবৃতিতে হাসপাতালের পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।
শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে ১৪টি দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলোও গাজার পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যার’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। সূত্র: আল-জাজিরা ও রয়টার্স