চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যার খবর যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
পলাশ সাহা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। তিন ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পালাশ সবার ছোট ছিল। দুপরে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে পলাশ সাহার বড় ভাই লিটন সাহা আত্মহত্যার খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
খবর পেয়েই তিনি চট্টগ্রামে রওনা দেন।
লিটন সাহা জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবাকে হারাই। তুখোড় মেধাবী ছোট দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরি।
তিনি বলেন, কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পলাশ ঢাকায় চলে যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য। জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিষ্টার হিসেবে যোগ দেন কর্মজীবনে। আরো ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসেন পলাশ সাহা। যেখানেই পরীক্ষা দেন সেখানেই চাকরি হয়ে যায় তার। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও কোনটায় যোগ দেননি তিনি। ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিষ্টারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেয়।
এসবি সদর দপ্তরে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিয়ে করে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি।
এদিকে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করেই পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তার মেঝ ভাই নন্দ লাল সাহা।
তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকেই পলাশের স্ত্রী সুষ্মিতা সহা টিনটিন মাকে দেখতে পারতো না। মা পলাশের সঙ্গে থাকুক তা চাইতো না টিনটিন। এ নিয়ে ঝগড়া সবসময় লেগে থাকতো। পলাশ মাকে খুব ভালোবাসতো। সে চাইতো মা তাকে ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাক। কয়েক মাস হলো পলাশ র্যাবে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে গেলে সেখানেও স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে যায়। এই নিয়ে পলাশের সঙ্গে টিনটিনের ব্যাপক ঝগড়া হয়। আমরা বড় দুইভাই একাধিকবার এই কলহের মিমাংসা করে দেই। দুদিন যেতে না যেতেই আবার বিবাদ শুরু হয়। অন্যদিকে আমরা মাকে গ্রামে রাখতে চাইলে সেও পলাশকে ছাড়া থাকতে নারাজ। মা ও স্ত্রী দুজনকেই প্রচন্ড ভালোবাসতো পলাশ। এই ভালোবাসাই আজ কাল হলো।
তিনি আরো বলেন, বুধবার সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা আরতি সাহা ও ভাই পলাশ সাহার গায়ে হাত তোলে সুস্মিতা সাহা। এটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই পলাশ সাহা আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা। সবার আশা-আকাঙ্খার জলাঞ্জলি দিয়ে স্ত্রীর উপর অভিমান করে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।
বড়ভাই লিটন সাহার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আর্য সাহা এক নাগারে কেদেঁই চলছে। কাকার মতো পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সে।
এদিকে পলাশ সাহার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। ইউপি সদস্য রণজিত সাহা বলেন, পলাশের মতো নিরীহ ও মেধাবী ছেলে এই গ্রামে ছিল না।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’