সখিপুর প্রতিনিধি: আইন অনুযায়ী বসতবাড়ির ওপর বার্ষিক নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিতে হয়। গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই কর আদায় করে থাকেন ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ও একজন চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ)। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে ট্যাক্স আদায়ের নামে অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ আছে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত শিটে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছেন কর্তব্যরত কর্মকর্তারা। এমনকি ছাপানো সংখ্যার ওপর কলম দিয়ে তাঁরা খেয়ালখুশিমতো টাকার পরিমাণ বসাচ্ছেন এবং সেটা দেখিয়ে সহজেই টাকা আদায় করছেন। এ যেন ‘দিনদুপুরে ডাকাতি’।
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হতেয়া রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর উত্তলন করা হয়েছে গেল সেপ্টেম্বরে। ৩ নং ওয়ার্ডের এস এম মতিয়ার রহমান টিনসেট বাড়ির বার্ষিক কর দিয়েছেন ১০০০ টাকা। একই ওয়ার্ডের প্রবাসী ইকবাল আহমেদের বাড়ি থেকে নেওয়া হয়েছে ২১০০। যার রশিদেও উল্লেখ রয়েছে ঠিক তাই। কিন্তু রশিদের কার্বন কপিতে লেখা মতিয়ার রহমানর বাড়ি থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০০ আর ইকবাল আহমেদ কর দিয়েছেন ১০০ টাকা। অর্থাৎ দুই বাড়ি থেকে গায়েব ২ হাজার ৬০০ টাকা। এভাবে মাসুদ রানার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৮০০ যার কার্বন কপিতে ১০০, হারুনের ১০০০ হয়েছে ১০০ ও লুৎফর রহমানের ৪০০ টাকা কার্বন কপিতে হয়েছে ১০০। ইউনিয়ন পরিষদের এমন চৌর্যবৃত্তির অসংখ্য প্রমাণ মিলেছে। চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে গ্রাম পুলিশ এর সাথে জড়িত।
এদিকে গ্রাম পুলিশ বলছে, টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব তাদের ছিল না। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটা এনজিওকে। তাহলে কোন এনজিওকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হলো? এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন খান আরো বলেন, অতিরিক্ত কর আদায় বা রশিদ জালিয়াতির বিষয়ে তিনি অবগত নন। এছাড়া তিনি এনজিওর নাম বলতে পারেনি এবং এনজিওর সাথে করা চুক্তিপত্রও দেখাতে পারেন নি। এ বিষয়ে ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার দুলাল আব্বাসীর সাথে কথা বলতে গেলে প্রথমে তিনি এড়িয়ে গেলেও পরে জানান, আগের বছর গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে টাকা তুলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গ্রাম পুলিশ তাদের হিসেব বুঝিয়ে দেয় নি তাই তারা এবার এনজিওকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেয়।
এনজিওর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সম্পর্কে তিনি জানেন না, এ বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হামিদুর রহমান জানেন। কিন্তু হামিদুর রহমান সবকিছু অস্বীকার করেছেন।
একপর্যায়ে সচিবের সহযোগিতায় এনজিওর ম্যানেজার পরিচয়ধারীর নাম্বার পেয়ে ফোন করলে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। তিনি জানান, এনজিওর নাম ‘গ্রাম বাংলা নিকেতন’ রামপুরায় তাদের অফিস। অফিসের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেন না।
এ বিষয়ে, সখিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।