খবরযোগ ডেস্ক:
গত বছরের ১ নভেম্বর হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন ছুটে যায় গঙ্গাসাগর থেকে নিশ্চিন্তপুর। গঙ্গাসাগর স্টেশন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আর নিশ্চিন্তপুর স্টেশন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত। বেশ তড়িঘড়ি করে এই রেলপথের উদ্বোধন করেন দুই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার এক বছরেও হুইসেল বাজিয়ে ছোটেনি ট্রেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ অংশে রেললাইন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ এখন পুরোপুরি শেষ হয়েছে। নভেম্বর মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভারত অংশেও কাজ শেষ বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এই পথ দিয়ে কবে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বা আদৌ হবে কি না সে বিষয়ে কারো কাছ থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা সদর থেকে আখাউড়া উপজেলার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের পথে ওই উপজেলায়ই গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন। গঙ্গাসাগর থেকে নিশ্চিন্তপুর ১২.২৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে বাংলদেশের অংশ পড়েছে ৬.৭৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো।
টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী রিপন শেখ বলেন, রেলপথ নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে। স্টেশনের যে কাজ, সেটি একেবারেই শেষের পথে। একটি শেডের চালা লাগানো ও রঙের যে কাজ, সেটি দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপরই কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
নানা সংকটে দেড় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছরের বেশি সময়েও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ১৮ মাস। করোনার প্রভাবসহ নানা কারণে পাঁচ দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সর্বশেষ নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন নাগাদ করা হয়। রেলপথ নির্মাণকাজ শেষে গত ১৬ আগস্ট ‘গ্যাং কার’ বা ‘ট্র্যাক কার’ চালানো হয়। গ্যাং কার নামে পরিচিত ট্র্যাক কার বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত রেলের ‘ইঞ্জিন’। এর সঙ্গে দুটি বগি সংযুক্ত করে এই পথে চালানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় ট্রায়াল রানের পর গত বছরের ৩০ অক্টোবর কনটেইনার ট্রেনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রান সম্পন্ন করা হয়।
৩১ অক্টোবর ওই রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে চাল, ডাল, গম, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, পাথরসহ অর্ধশত পণ্য আমদানির অনুমোদন দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বছর ১ নভেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে অনেক কাজ বাকি রয়ে যায়।
আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান জানান, পণ্যবাহী ট্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু হলে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো পণ্য আনতে পারবেন।