বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সহিংসতা জেরে নানা দাবি নিয়ে সারাদেশে পুলিশ যখন কর্মবিরতিতে তখন সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কুড়িগ্রামেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেড়াতে ট্রাফিকের দায়িত্বে নেমেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
কুড়িগ্রামের তিন দিকে ভারত সীমান্ত হওয়ায় সহজে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাদক আসে হরহামেশায়। বিজিবি, পুলিশের হাতে মাদকসহ কারবারীরা আটকও হয় প্রায়ই। পুলিশ কর্মবিরতির সুযোগে জেলায় বেড়ে যায় মাদকের কারবার। এমন শঙ্কা ছিল সাধারণ মানুষ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীরও।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্বপালনের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস তল্লাসী করে মাদক উদ্ধার করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সবজির বস্তায় পরিহনের সময় ধাওয়া দিয়ে মাদক উদ্ধার করে থানায় দেয় ছাত্ররা।
রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারীতে পৃথক তিনটি ঘটনায় ৩১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেন তারা। আটক করা হয় দুই জনকে। থানায় তিনটি মামলা হয়েছে এসব ঘটনায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় নাগেশ্বরীতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সময় গোপন খবর আসে দূরপাল্লার বাসে মাদক পরিবহন হচ্ছে। পরে ঢাকাগামী বাসে তল্লাসী চালান তারা। এক পর্যায়ে নকসী এক্সপ্রেস নামে বাসে তল্লাশি করে ১০ কেজি ও এনা পরিবহনের একটি বাসে তল্লাসি করে প্রায় ১২ কেজি গাজা উদ্ধার করে। তবে এনার বাসচালক ও মাদক পরিবহনকারী পালিয়ে যায়।
নাগেশ্বরীর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জোবাইদ আলম সিদ্দিকী আলিফ ও নাসিরুল ইসলাম নীরব জানান, ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সময় সংবাদ পেয়ে সুলতান আহমেদ সজীব, মেহেদী হাসান মীম, জাহিদ হাসান মিলু, মারুফ, মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ তামিমসহ অনেকে মিলে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসে তল্লাসী চালান। দুটি বাসে গাঁজা পেলে থানা পুলিশ ও থানায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানান তারা। পরে দুজনকে আটকসহ মাদক থানায় এনে দুটি মামলা দেয় পুলিশ। মাদক উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আকরাম হোসেন এর নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রূপ কুমার সরকার বলেন, পুলিশ মাঠে না থাকায় মাদক কারবারীরা মাথা চাড়া দিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা সেই দু:স্বময়ে স্বস্তি এনে দিয়েছে। মাদক উদ্ধার কঠিন কাজ। সে কাজটি তারা করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
অপরদিকে মাদকের খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের জানান ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাটের ইউপি সদস্য ময়েন উদ্দিন। পরে ওৎপেতে থেকে ৯ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও পুলিশ জানায়, রোববার (১১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের বটতলা ক্লাবের দক্ষিণে রাস্তায় সবজির বস্তায় গাঁজা ও মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায় মাদক কারবারি। শিক্ষার্থী আবু সাইদ খন্দকার, শাকিল, লাইজু ও আবু সফিয়ানসহ অনেকে জানান, ক্লাব মোড়ে ছোটখাটোমারী ব্রিজের পাশে সন্দেহভাজন ব্যক্তির পথ রোধ করলে তিনি বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। বস্তাটি থানায় এনে তাতে মিষ্টি কুমড়া, আলু ও পেঁয়াজ ৯ কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায়।
জয়মনিরহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ময়েন উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যায় জানতে পাই মাদক নিয়ে যাওয়া হবে। বিষয়টি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেই। পরে তারা গাজা উদ্ধার করে। ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি অজ্ঞাত। ছাত্রদের ধন্যবাদ জানাই।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের এই কাজকে আমরা শতভাগ সমর্থন করেছি। আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আমরা চাই তাদের এই কমিউনিটি আরও বিস্তৃত হোক। তাদের সকল কাজে পুলিশের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।