দেশে কোনো উৎসব না চললেও তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও বেড়ে চলছে। কেজি ৬৫ টাকা ছাড়িয়েছে। সরকার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করায় সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে তেল। তবে আলু, ডিম, চিনি, আটার দাম বাড়েনি।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রয়লারের দাম বেড়ে ২০০ টাকা, সোনালিও ৩১০ টাকা
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে মুরগির দর। তারা এক-দুই দিন কমিয়ে চার থেকে পাঁচ দিন দাম বেশি নিচ্ছে। ফলে ভোক্তার পকেট খসছে। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকাম (আড়ত) থেকেই দাম নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। এর প্রভাব বাজারেও পড়ছে। আগের সপ্তাহে দাম কমলেও এ সপ্তাহে বেড়েছে। বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল সেই ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় ঠেকেছে। আর সোনালি ৩০০ ছাড়িয়ে ৩১০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়েছে।
এ ব্যাপারে সেগুনবাগিচা বাজারের জসিম ব্রয়লার হাউসের জসিম ও হাতিরপুল বাজারের মাসুম ব্রয়লার হাউসের মাসুম খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে দুই দিন হঠাৎ করে মুরগির দাম কমে। তারপর আবার বাড়তে শুরু করেছে। করপোরেটরা এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে খামার থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। ১৭০-১৮০ টাকার ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা এবং ২৭০-২৮০ টাকার সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি দামের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারও খবরের কাগজকে বলেন, ‘করপোরেটরা মুরগি ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের উদ্দেশ্য, খামারিরা শেষ হয়ে গেলে তারা ইচ্ছামতো বাড়তি দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করবে।’
তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ডিমের বাজারেও একটু স্বস্তি দেখা গেছে। বিভিন্ন বাজারে আগের মতোই ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। আকারভেদে আগের মতোই রুই, কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজিতেও বৈশাখের তাপ
রমজানের পর ঈদুল ফিতর পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ আগে। তার পরও বেগুনের কেজি সেঞ্চুরির নিচে আসছে না। অন্য সবজির দামও সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৮০ টাকার কমে ফুলকপি ও ৪০ থেকে ৫০ টাকার কমে বাঁধাকপির পিস মিলছে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহরাব আলী ও হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম শেখ বলেন, ‘শীতের সবজি শেষ। গরমের সবজি উঠেছে। তার পরও অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে। সবুজ বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, লম্বা বেগুন ১১০, শসা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। লেবুর হালিও ৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
দাম বাড়ায় সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের
ভোজ্যতেল মিলমালিকরা বারবার দাম বাড়ার প্রস্তাব করলে সরকার গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত তেলে লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা, খোলা ও পাম তেলে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর পরই বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে গেলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, আগের চেয়ে সরবরাহ বেড়েছে। নতুন রেটের তেল বাজারে এসেছে। তবে আগের রেটের তেলও বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজির আটা ১২০ টাকা, ছোলার কেজি ১০৫, চিনি ১২০, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আগের মতোই আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেনি চালের দাম
হাওরে বোরো ধান উঠলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই বাড়তি দামে ভালো মানের মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯৬ টাকা কেজি, রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ ও মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজারের চাল বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধান ওঠা শুরু হয়েছে। কিন্তু চাল বাজারে আসেনি। এ জন্য দামও কমেনি। আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’