টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
নিয়মিত ট্রেন চলাচলের জন্য আজ উদ্বোধন করা হলো যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু। মঙ্গলবার সকালে সেতুর পূর্ব পাশে ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন এলাকায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম ৷ উদ্বোধনের ফলে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ আরও সহজ হলো। এতে বাংলাদেশর সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রার আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
তবে ডাবল লেনের হলেও বর্তমানে সিঙ্গেল লেন চালু হওয়ায় সেতুটির পুরোপুরি সুফল সহসাই মিলছে না যাত্রীদের।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্ব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেব ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি এবং জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহা-পরিচালক ইতো তেরুয়ুকি ।
উদ্বোধনের পর সংশ্লিষ্টরা উদ্বোধন ট্রেন নিয়ে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রাপ্তে আসেন । সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করেন ৷

সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেন,আগে ট্রেন ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতো কিন্তু এখন ট্রেনটি মিনিটে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে পারবো। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে উত্তর অঞ্চলের পথে একটি নতুন ধার উন্মোচন হলো। আন্তর্জাতিক ভাবেই এই সেতুটি অনেক ভূমিকা রাখবে। এই সেতু দিয়ে সকল যাত্রী চলাচলে ভাড়া কিছু বৃদ্ধি পাবে। আগে ভাড়া ছিলো ১৬ গুন এখন হবে ৩০ গুন হবে। সুবিধা ভোগ করার জন্য কিছু ভাড়া বৃদ্ধি করা হলো। জয়দেবপুর থেকে যমুনা ইব্রাহিমাবাদ পর্যন্ত ডবল লেন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রেল সিডিউলে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি তবে এখন আরো দ্রুত চলে যাবে। এছাড়াও আমরা পরিবহন খাতে ট্রেনকে বানিজ্যিক ভাবে চালাতে পারবো এই সেতু দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগের চেয়ে বর্তমানে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা ট্রেনে নতুন কোচ বাড়ানোর চিন্তা করা হয়েছে শুধু মাত্র যাত্রীদের সুবিধার জন্য।
যমুনা রেলসেতু নির্মানে দূর্নীতি হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে সচিব বলেন,এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পায়নি, পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রেল সেতু কর্তপক্ষের তথ্যঅনুযায়ী, সেতুটি ৫০টি পিলার এবং ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত। নতুন রেলওয়ে সেতুটি যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে অবস্থিত। দেশের দীর্ঘতম ও আধুনিক এই সেতুর ওপর দিয়ে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারবে। ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ৩৮টি ট্রেন প্রতিদিন তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে যাতায়াত করে।
১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে যমুনা রেল সেতু পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়।পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর সময় একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সেতুটি অতিক্রম করেছিল। এতে সেতুটি পারি হতে সময় লেগেছিলো প্রায় সাড়ে ৩ মিনিট৷
সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। যার ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং বাকি অর্থ সরকার দিয়েছে। জাপানের ওটিজি এবং আইএইচআই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু।