ফের ট্রাম্প জামানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাও প্রত্যাশিত, চমক নেই খুব একটা। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরাই মূলত দায়িত্বশীল পদে। অনেকেই বলছেন, কয় বছর আগেও মোস্ট আনপ্রেডিক্টেবল ট্রাম্প এখন মোস্ট প্রেডিক্টেবল। ভোটের আগের ও পরের কথা আর কাজে দারুণ মিল তার।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মার্কিন নীতি দারুণভাবে প্রভাবিত করে ঢাকাকে। সেইসাথে চীন ও ভারত নিয়ে ট্রাম্পের ভাবনা আর পদক্ষেপে প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও।
বিশ্লেষকরা শঙ্কা করছেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এতে করে বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তাও কমতে পারে।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র্রের চীন নীতি, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে প্রভাব ফেলার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর চীন ও ভারত— দুই প্রতিবেশির সাথে আগের মতো ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখাও কঠিন হতে পারে বলে ধারণা তাদের। সেক্ষেত্রে কোনো একটি পক্ষ বেছে নেয়ার চাপও বাড়তে পারে ঢাকার ওপর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, যেসব জায়গায় অর্থনৈতিক সুবিধা থাকবে সেইসব দেশের সাথে এক ধরনের জোরালো সম্পর্কের সৃষ্টি হবে। চীনের ক্ষেত্রে তার একটা ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারতের সাথেও ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা এবং দুটোই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার সাথে জড়িত। চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে বাংলাদেশের ফরেন পলিসির গতিপ্রকৃতি কী হবে, এইটা আগের মতো যেটা আমরা বলতাম ব্যালেন্সিং, এইটা খুব সম্ভবত থাকবে না। সুতরাং সেখানে এক ধরনের অ্যালায়েন্স পলিটিকসের মতো টিল তৈরি হতে পারে, সেটা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি থাকা দরকার।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বললেন, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যে সংগ্রাম, সেখানে বাংলাদেশ যদি দ্রুত একটা সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, যে ফর্মেই হোক অথবা যে ধরনের সরকারের মাধ্যমেই হোক তাহলে আমরা সম্ভবত আরও একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। রিপাবলিকানরা ঢালাওভাবে যে অর্থ সাহায্য বা প্রকল্প সাহায্য যেটা করে সেটা অবশ্যই স্থিমিত হয়ে আসবে, মানে কমে যাবে।
বাংলাদেশের এককভাবে সবচে বড় রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। খুব স্বাভাবিক কারণেই ট্রাম্পের ট্যাক্স নীতি ভাবাচ্ছে বিশ্লেষকদের। এর বাইরে জলবায়ু ও স্বাস্থ্য খাত কিংবা রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ কমতে পারে বলে ধারণা।
তাই ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদার এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে মিশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি উন্নতি করতে হবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির।
অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশের ওয়াশিংটন দূতাবাসকে সর্ম্পূর্ণ ঢেলে সাজানো, অনেক বেশি আর্থিক দিকটাও চিন্তা করতে হবে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের লবির কিন্তু একটা বড় রকমের ভূমিকা থাকবে আগামী চার বছর। সুতরাং সেই জায়াগাতে আমাদেরকে এখন মনোযোগ দিতে হবে।
মাহফুজুর রহমান বললেন, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে চীন নীতিটা যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে, তখন হয়তো আমাদের প্রতিরক্ষা নীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কতগুলো প্রস্তাব অনেকদিন থেকেই ঘুরাঘুরি করছে, ঝুলে আছে, এইগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধরনের কোনো ব্যবস্থার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপ আসতে পারে। এগুলো মোকাবেলার জন্য আমাদের একটা বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয় সরকার দরকার। একইসাথে সুশাসনও দরকার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা, সেটি মাথায় রেখেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কাজ করার পরামর্শ দিলেন এই দুই বিশ্লেষক