খবরযোগ ডেস্ক: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সব বন্দির মুক্তি, মিথ্যা মামলা বাতিল, চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং প্রজ্ঞাপনের ‘ঙ’ ধারা বাতিলসহ পিলখানা হত্যা মামলায় পুনর্তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবিতে বিডিআর পরিবারের সদস্যদের টানা দুইদিনের কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা ছেড়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এ দিকে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ও শনিবার (১১ জানুয়ারি) জেলায় জেলায় দাবি আদায়ে জনসংযোগ এবং রবিবার (১২ জানুয়ারি) একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
এ দিকে আগামী ১৯ জানুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক মামলার জামিন শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মাহিন সরকার বলেন, ‘বিগত দুই দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের সদস্যরা অবস্থান করছেন। গত বুধবার সমাবেশ করলেও আমরা সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাইনি। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অংশ হিসেবে আজ (বৃহস্পতিবার) স্বল্প সময়ের জন্য শাহবাগ ব্লকেড করে, জনদুর্ভোগ এড়াতে দুই ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শহিদ মিনারে অবস্থান নিই। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে দাবির বিষয়ে সংহতি জানানো হয় এবং পরবর্তী যে শুনানি ১৯ জানুয়ারি সেটি জানানো হয়েছে। আমরা মনে করেছি এই শুনানির যে সময় সেটি অনেক দীর্ঘ এবং স্বাভাবিক বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে কি-না, সেই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করছি। বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশি বাজারে কোর্ট বসার কথা ছিল, সেখানে কোর্ট বসতে দেওয় হয়নি। যাবতীয় নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের মেরুদণ্ড সোজা করে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সবকিছু জনগণের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বলেন, ‘প্রত্যেককে অনুরোধ করব, আপনারা যে দাবি নিয়ে এসেছেন, সরকার এ বিষয়ে বেশ ইতিবাচক। যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হচ্ছে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। এখনো লড়াই বাকি রয়েছে এবং সবাইকে আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনারা নিজ-নিজ জেলায় ফিরে গিয়ে অনলাইন-অফলাইনে শুক্র ও শনিবার জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করবেন। এ ছাড়া রবিবার জেলায় জেলায় প্রেসক্লাবের সামনে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে এবং ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
মাহিন সরকারের এমন ঘোষণার পরই একে একে শহিদ মিনার ছাড়তে শুরু করেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা।
পরে বেলা ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন সরকারের অনুরোধে সাড়ে ৩টায় শাহবাগ ছেড়ে শহিদ মিনারে অবস্থান নেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা।
গত বুধবার শহিদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন তারা।
পরে শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল এলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা পেয়ে শাহবাগ থানা ও জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি পূরণের ব্যাপারে আলটিমেটাম দিয়ে বুধবার সারা রাত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। যাবজ্জীবন সাজা হয় ১৮৫ জনের। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, খালাস পান ২৮৩ জন।
খালাস বা সাজাভোগ শেষে এখনও বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে রয়েছে।