খেলা ডেস্ক: অ্যাডিলেড ওভালে দ্বিতীয় দিন শেষে তাহলে বড় প্রশ্ন এটাই। ঋষভ পন্ত বা নীতীশ রেড্ডির মধ্যে কেউ ট্রাভিস হেড হতে পারবেন?
শেষ বিকেলে মিচেল স্টার্কের বলে শুবমান গিলের মাঝের স্টাম্প উড়ে যাওয়া, কিংবা এর আগে স্কট বোলান্ডের শিকার হয়ে বিরাট কোহলির ফেরা অথবা প্যাট কামিন্সের বলে রোহিত শর্মার অফ স্টাম্প নড়ে যাওয়া দেখার পর ভারতীয় সমর্থকেরা মনে হয় না খুব বেশি আশাবাদী হবেন।
আবার হতেও পারেন। অস্ট্রেলিয়ান পেসত্রয়ীয় এই ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও তো পন্ত খেলছেন পন্তের মতো, সাহসের সঙ্গে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন রেড্ডি। ভারতকে এই টেস্টে হার থেকে বাঁচাতে হলে এই দুজনেরই অথবা অন্তত একজনের ট্রাভিস হেড হওয়া ছাড়া খুব বেশি উপায় নেই আসলে।
ওহ, হেড কী করেছেন সেটাই তো বলা হয়নি। অ্যাডিলেডের দর্শকেরা তো বটেই, ক্রিকেটপ্রেমী কারও অবশ্য এতক্ষণে সেটা আর অজানা থাকার কথা না। আজ সকালে যখন অ্যাডিলেডের ঘরের ছেলে হেড ব্যাট করতে নামেন, ভারতের ১৮০ রানের জবাব দিতে নামা অস্ট্রেলিয়া তখন ৩ উইকেটে ১০৩। সিরাজের লো ফুলটসে বোল্ড হয়ে যখন ফিরে যাচ্ছেন, তখন তাঁর নামের পাশে ১৪১ বলে ১৪০ রান। ১৭টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৭ উইকেটে ৩১০। সেখান থেকে আরও ২৭ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়া যখন থামে, ১৫৭ রানের লিড হয়ে গেছে স্বাগতিকদের। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার এই চাপের সঙ্গে স্টার্ক-কামিন্স-বোলান্ডদের আগুনে বোলিং ভারতকে দ্বিতীয় ইনিংসেও একেবারে নড়বড়ে করে দিয়েছে। ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারানো রোহিত শর্মার দলের ইনিংস হার এড়াতে আরও দরকার ২৯ রান।
অ্যাডিলেডে হেডের এমন দুর্দান্ত ব্যাটিং অবশ্য এখন বেশ চেনা দৃশ্যই হয়ে গেছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেটারের জন্ম এই শহরে, এই মাঠে খেলেই তিনি হেড হয়েছেন। বিগ ব্যাশেও তাঁর দল অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স। তিন সংস্করণেই এই মাঠে তাঁর দুর্দান্ত পরিসংখ্যান। এ নিয়ে এখানে ৭ টেস্টে ৯টি ইনিংস খেলে হেড করেছেন ৬৩৪ রান। ক্যারিয়ার গড় ৪৩.২০ হলেও অ্যাডিলেডে সেটা ৭৯.২৫! টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর ৮ সেঞ্চুরির ৩টিই এই মাঠে, ক্যারিয়ার সেরা ১৭৫ রানের ইনিংসটিও খেলেছেন নিজের এই প্রিয় মাঠে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
সেই অ্যাডিলেডে হেড আবারও পেয়েছেন ভারতকে। যাদের বিপক্ষে বড় মঞ্চে বড় কিছু করাটা তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে বলা যায়। লন্ডনে সর্বশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল এবং আহমেদাবাদে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল দুটিতেই অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, দুটিতেই ম্যাচসেরা হেড। লন্ডনে খেলেছিলেন ১৬৩ রানের ইনিংস, আহমেদাবাদে ১৩৭ রানের।
সেই ভারতের বিপক্ষে আজ আরও একটা সেঞ্চুরি করে ভারতের ম্যাচে ফেরার কাজটা অনেকটাই কঠিন করে দিয়েছেন হেড। যে কারণেই হয়তো তাঁকে আউট করে একটু রাগ দেখিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ, হেডকে দেখিয়ে দিয়েছেন ড্রেসিংরুমের পথও। ওই দৃশ্যটা দেখে অবশ্য সিরাজেরই সমালোচনা করেছেন কিংবদন্তি ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও এই টেস্টের ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার, ‘সে (হেড) ১৪০ রান করেছে। যদি ১/২ রান করে আউট হয়ে যেত আর তাকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দেওয়া হতো, সেটা অন্য ব্যাপার হতো। সে এখানকার (অ্যাডিলেডের) ছেলে, এখানকার তারকা। ওর সঙ্গে এই আচরণ করে সিরাজ দর্শকদের কাছে ভিলেনই হয়ে গেছে। বরং সে (সিরাজ) যদি সেঞ্চুরিটার জন্য তালি দিত, সবাই প্রশংসা করত।’
সিরাজ প্রশংসা নিতে না পারলেও হেড প্রশংসায় ভাসছেন। আজকের ইনিংসটা অবশ্য আরও একটি কারণে বিশেষ তাঁর কাছে। এদিন যে প্রথমবার মাঠে এসে বাবার খেলা দেখেছে হেডের ছেলে হ্যারিসন। গত মাসেই জন্ম নেওয়া হ্যারিসনকে কোলে নিয়ে গ্যালারিতে বসে ছিলেন হেডের স্ত্রী জেসিকা। সেঞ্চুরিটা হয়ে যাওয়ার পর জেসিকাই দিলেন আরও একটা তথ্য, ‘দুই বছর আগে আমাদের প্রথম সন্তান মিলা জন্ম নেওয়ার পর ওকে নিয়ে যখন প্রথম মাঠে যাই, সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিল সে (হেড)। আজ হ্যারিসনও প্রথম মাঠে এল, আজও সেঞ্চুরি।’
বাবার জন্য দুই সন্তানই কী সৌভাগ্যই না বয়ে নিয়ে এসেছেন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ১৮০ ও ২৪ ওভারে ১২৮/৫ (গিল ২৮, পন্ত ২৮*, রেড্ডি ১৫; কামিন্স ২/৩৩, বোলান্ড ২/৩৯, স্টার্ক ১/৪৯)।
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮৭.৩ ওভারে ৩৩৭ (হেড ১৪০, লাবুশেন ৬৪, ম্যাকসুয়েনি ৩৯; বুমরা ৪/৬১, সিরাজ ৪/৯৮)।