খবরযোগ ডেস্ক : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ দেশের চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে দেশের শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা ও বৈঠক করে এই উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা যায় বিএনপির ৬ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাউদ্দিন আহমেদ। তবে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও মো. মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের যে সংঘর্ষ আমরা আমাদের দলের পক্ষে উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা আশা করেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা তার পরিষদ নিয়ে দ্রুত এসব বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান করবেন। দেশে যেন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। এই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, যারা এর স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদেরকে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আমরা বলেছি টিসিবির ট্রাক বৃদ্ধির কথা বলেছি। কৃষিতে সার বিতরণের যে সমস্যা আছে সেগুলো নিরসনের কথা বলেছি। বিষয়টি সহজ ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি। শিল্পে উৎপাদনের জন্য স্বাভাবিক অবস্থা যেন থাকে সেজন্য বলেছি। বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। প্রয়োজনে সরকারকে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছি।
বিগত নির্বাচনগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা জোর করে ক্ষমতায় এসেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, একইসঙ্গে এখনও যেসব ইউনিয়ন পরিষদ বহাল আছে সেগুলো ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছি। যেহেতু সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদও ভেঙে দিতে বলেছি। পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠনের কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ট্রেড বডি ও ইউনিয়নসমূহ পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে গঠনের কথা বলেছি। পাশাপাশি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার কথা বলেছি। তাছাড়া বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা আমাদের কথা মনযোগ সহকারে শুনেছেন।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন জাতির একতা চান। ছাত্র-জনতা, হিন্দু-মুসলিম সবার মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বিষয় প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। এসময় চট্টগ্রামের ঘটনায় ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৬ জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা ককটেলসহ ধরা পড়েছেন বলেও জানান তিনি।