নিজস্ব প্রতিবেদক,টাঙ্গাইল:
গত মার্চ মাসের ২৯ তারিখ রাতে টাঙ্গাইলের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে জোর পূর্বক অস্ত্রের আমাকে ধর্ষন করে। সে আমাকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ছোট বোন হিসাবে ডাকে তার পর আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তার বাসায় ধর্ষন করে। আমি ওই রাতেই তুরাগ থানায় একটি মামলা করি। আর মামলা করার পরেই ওই রাতেই আমার স্বামীকে গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি ও তার লোকজন রাত আনুমানিক ৪ কি ৫ টার দিকে অস্ত্রের মূখে তুলে নেওয়া হয়। এরপর বড় মনি আমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে। সকালে বড় মনিরের ভাইরা সুরুজ তার বাসা উত্তরা মাসকট প্লাজার পিছনে ওই জায়গায় আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার পরে ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলেন বড় মনি, ছোট মনির ও তাদের ক্যাডার বাহিনীর প্রান্ত, সাক্ষর ওরা সবাই উপস্থিত ছিলেন। উনাদের উপস্থিতি তে আমার স্বামীকে বড় মনি অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেয় যে তোর স্ত্রী কে মামলা তুলে নিতে বল এঔটা সেইটা বলে। এবং কী আমার স্বামীকে বলা হয় যে ডিসিকে ফোন দে কথা বল মামলা তুলে নিতে বলই কথা গুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও টাঙ্গাইল – আসনের (গোপালপুর-ভুঞাপুর) সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের কাছে ধর্ষিত হওয়া ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ খবরযোগকে বলেন, বড় মনি ডিসিকে কল দিয়ে আমার স্বামীকে দিয়ে বলায় যে মামলা যে কোন ভাবে তুলে নিতে হবে। এরপর ডিসি অফিসে ছোট মনির ও বড় মনি মামলা তুলে নিতে বাঁধ করা হয়। আমার স্বামীকে বুঝানো হয় যে যে কোন মূল্যে মামলা তুলে নিতে হবে। এরপর মামলা করার পরের দিন আমাকে মেডিকেল করানোর কথা থাকলে মেডিকেলে নেওয়া যাওয়া হয়। এরপর সকালে মেডিকেলে নেওয়া হলেও সন্ধ্যা হয়ে গেলেও কোন সেম্পল বা কোন ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়না। পাশে থাকা এক মহিলা পুলিশ সদস্য আমাকে বেশ কিছুক্ষণ পরে বলে যে আপনি চলে যান কোন মেডিকেল করানো হবেনা। এরপর তারা নানা জায়গা থেকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। পরে আমি যখন বলি যে মেডিকেল না করালে মিডিয়ায় কল দিব সংবাদ করাবো তখন তারা আমাকে বলে যে করানো হবে উপর তলায় যান পরে বেশ কিছুক্ষণ আমাকে অপেক্ষা করায়। এরপর রাতে আমার কাছে আমার স্বামীকে বড় মনি’র লোকজন সাক্ষর প্রান্ত ও তার আইনজীবী রাব্বী আসে। আমার স্বামীকে দিয়ে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে মামলা যেন তুলে নেই। আমার স্বামী আমাকে বলে যে মামলা তুলে নাও ওরা ক্ষমতাবান আমরা তাদের সাথে পারবো না। কিন্তু আমি তাদের বিচার চাই এ জন্য রাজি হচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার স্বামীর চোখে মুখে পানি। এরপর আমি মামলা তুলে নিতে অস্বীকার করলে তারা আরও হুমকি ধামকি দেয়। পরে যখন নিচের দিকে তাকাই আমি তখন দেখি ছোট মনির নিচে দাড়ানো। আমি মামলা কোন ভাবে তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামীকে আবার তুলে নিয়ে যায় বড় মনি ও ছোট মনি। এর পর রাত ১০ টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তা এসে বলে যে আজকে ডাক্তার চলে গেছে আজকে মেডিকেল হবেনা। পরে পুলিশের সাথে আবার থানায় নিয়ে যায় আমাকে। পুলিশ আমার মোবাইল ফোন ও কাপড়ের আ্যাগ নিয়ে যায়। এই অবস্থায় আমার স্বামী বা পরিবার কেউ জানাতে পারি নাই। পরে আবার সকালে মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখানে গিয়ে দেখি বড় মনিরের আইনজীবী রাব্বি, ক্যাডার বাহিনী সাক্ষর ও প্রান্ত। তারা আমাকে বলে যে তুমি মামলা তুলে নাও তুমি কি এখনো বুঝতাছো না যে তোমার মেডিকেল টেস্ট হচ্ছে না তোমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছো না? এখন কি বুঝতে পারছো না যে তুমি পারবেনা আমাদের সাথে।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, বড় মনিরের লোকজন মেডিকেলে আমাকে একটি ভিডিও দেখায় যে আমার স্বামীকে তারা একটি চেয়ারে হাত পিছনে বেঁধে রেখে মারধর করছে। এরপর আমার স্বামীর এই অবস্থা দেখে আমি ভয় পেয়ে কান্না করে দেই। আমার স্বামীর এই অবস্থা দেখে আমার আর এদিক সেদিক চিন্তা করার কোন সুযোগ পায়নি। তখন আমি বলি যে আপনারা যা বলবেন তাই করবো তবু আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন আপনারা। ওই সময়ে তারা মেডিকেলের একটি রুমে নিয়ে গিয়ে একটি সাদা কাগজ দেয় সেখানে দুইটা কাগজে সাইন করতে বলে। এরপর আমাকে তুরাগ থানায় নেওয়া হয়। থানায় গিয়ে দেখি সাক্ষর প্রান্ত উকিল রাব্বি ও আমার বাবাকেও ডাকা হয়েছে।
থানায় যাওয়ার পরে ওসি স্যারের রুমে নেওয়া হয় এরপর তারা আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হয় যে কিভাবে মামলা তুলে নিতে হবে। তারপর আমি ওসি স্যারকে শিখিয়ে দেওয়া কথা বললাম ও ভিডিও জবানবন্দি দিলাম। এরপর আমার বাবাকে ও আমাকে ছেরে দেওয়া হয়।
আসলে আমি মামলা টি তুলতে চায়নি আমার স্বামীকে জিম্মি করে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেছে। ২৯ তারিখ রাতে যদি সাংবাদিকরা না থাকতো তাহলে হয়তোবা মামলা পর্যন্ত যেতে পারতাম না। বড় মনিরের বাসায় দারোয়ান ও মিথ্যা বলছে। এরপর সাংবাদিকরা বাসার সিসি টিভি ফুটেজ আনার পরেই মামলা নিয়েছিলো। এই মামলা যে কয়দিন ছিলো সে কয়দিন আমার স্বামীকে নিয়ে কিভাবে দিন কাটিয়েছি আল্লাহ জানে। এখন বর্তমানে স্বাধীন হয়েছে তাই কথা গুলো বলতে পারলাম। এই ঘটনার পরে ভয়ে আমি ঘর থেকে বের হতে পারতাম না। এখনো বের হতে পারিনা। আমার স্বামী বিদেশ চলে গেছে এই ঘটনার পরেই। বিগত দিনে বড় মনি টাঙ্গাইলের ইশাকে হত্যা করেছে তার বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে তাই ভয়ে আতঙ্কে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখনো বড় মনি ও ছোট মনিরের লোকজন হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি দেশ বাসীর কাছে বিচার চাই এই দুই ভাইয়ের। আপনারা বড় মনিরের বিচার চাই যাতে করে আর কোন মেয়ে যেন ইশা ও আমার মতো ধর্ষিত না হয়।
গৃহবধূ আরো জানায়, বড় মনি এখনো লোকজন দিয়ে আমাকে হুয়াটসআপে ভিডিও পাঠিয়ে ব্লাক মেইল করছে। যাতে করে আমি কারো কাছে মুখ না খুলি ও এ বিষয়ে কথা না বলি।
এসকল বিষয়ে বড় মনি ও ছোট মনির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকেই তাদের আর টাঙ্গাইল দেখা যায়নি।
তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির টাঙ্গাইল দুই আসনের সংসদ সদস্য, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের মেয়ের জামাই এদিকে টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি।
বড় মনি ৪ আগষ্ট ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে ছাত্র জনতার উপর গুলি ছোড়েন।
এর আগে এক কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের ঘটনায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় ধর্ষণ মামলা করা হয়। ওই কিশোরী সন্তানও প্রসব করে। বড় মনিরের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ এবং ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ওই কিশোরী। অবশ্য কিছুদিন পর কিশোরীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। সে কিশোরীর বাসার সামনে প্রতিনিয়ত বড় মনিরের লোকজন বিরক্ত ও উত্তপ্ত করতো।
বড় মনির গুলি ছোড়ার বিষয়ে টাঙ্গাইলের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করা জানায়, বড় মনি এখনো বাহিরে থাকে কিভাবে আমরা তা জানতে চাই প্রশাসনের নিকট। আমরা তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী করছি।