ক্রীড়া প্রতিবেদক :
ভুটানের বিপক্ষে সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে একসঙ্গে জ্বলে উঠলেন সাবিনা খাতুন, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমারা। তাতে গ্রুপ পর্বে চমক জাগানিয়া ফুটবল উপহার দেওয়া ভুটান প্রথমার্ধেই ৫ গোল হজম করে রীতিমতো কোনঠাসা। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো উপলক্ষ্যই পেল না। বরং বাংলাদেশ আরও দুই গোল আদায় করে তুলে নিল দাপুটে এক জয়। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা পৌঁছে গেল কাঙ্খিত ফাইনালের মঞ্চে।
কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিক করেছেন তহুরা, সাবিনা খাতুন করেন জোড়া গোল। এছাড়া ঋতুপর্ণা চাকমা ও শিউলী আযীম করেছেন একটি করে গোল। ভুটানের একমাত্র গোলটি ডেকি হাজমের। প্রথমার্থ শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৫-১ গোলে।
একই ভেন্যুতে আজ সন্ধ্যায় প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক নেপাল ও ভারত। এই ম্যাচে জয়ীদের বিপক্ষে আগামী বুধবার শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
এ ম্যাচে বাংলাদেশের গোল উৎসবের শুরু সপ্তম মিনিটে। তহুরার পাস থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার দেখার মতো গোলে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের। বক্সের বাইরে থেকে বাঁয়ের শটে গোলটি আদায় করেন টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে থাকা এই ফুটবলার। আসরে এটি তার প্রথম গোল।
১৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন তহুরা। ডানপ্রান্ত থেকে শিউলি আযীমের বাড়ানো বল ধরে প্রথমে বডিডজে একজন খেলোয়াড়কে বোকা বানান তিনি। এরপর ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বাপায়ের শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বেও যিনি জোড়া গোল করেছিলেন।
১৮ মিনিটে প্রায় গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। ভুটান অধিনায়ক প্রেমা বিপদজনকভাবে ঢুকে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের ডিফেন্ডস তখন উন্মুক্ত। রুপনা ডি-বক্স ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্রেমাকে থামাতে পারলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল পেয়ে যান ডেকি হাজম। তবে তার নেওয়া শট পোস্টে ছিল না। ২৩ মিনিটে নামগেল ডেমার শট রুখে দেন রুপনা।
২৫ মিনিটে সাবিনার শট দূরের পোস্টে লেগে ফিরলে গোল বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। তবে পরের মিনিটেই মনিকার স্কয়ার পাস থেকে গোল আদায় করেন নেন সাবিনা। তাতে ৩-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ আসরের সাবিনার প্রথম গোল এটি।
৩৫ মিনিটে ফের জালে খুঁজেন নেন তহুরা। এবারও বক্সের বাইরে বা-পায়ের দেখার মতো শটে গোলটি আদায় করেন তিনি। বাঁ-প্রান্ত থেকে তাকে বলটি বাড়ান ঋতুপর্ণা। পুরো আসরেই লেফট উইংয়ে যিনি অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন।
৩৭ মিনিটে সাবিনা খাতুন গোলরক্ষককে একা পেয়ে জাল খুঁজে নিতে ভুল করেননি। এ গোলের সুবাদে ৫-০ গোলের লিড পায় সাফের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। সাবিনা পান ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল। ৪১ মিনিটে ডেকি হাজম গোল করলে ব্যবধান কমায় (৫-১) ভুটান। তবে প্রথমার্ধের গল্পটা বাংলাদেশেরই।
এ ম্যাচের একাদশে একটি বদল আনেন বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গোল করা শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় মোছাম্মৎ সাগরিকাকে একাদশে সুযোগ দিয়েছেন তিনি। গতকালকের অনুশীলনে বোঝা যাচ্ছিল শামসুন্নাহার জুনিয়রের চোট রয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচে চোখে আঘাত নিয়ে খেলেছিলেন তিনি। সেই আঘাত নিয়ে খেলেই দলকে মূল্যবান পয়েন্ট এনেছিলেন। ম্যাচ শেষে হাসপাতালেও যেতে হয়েছিল।
তবে শামসুন্নাহার জুনিয়র আসলে ভুগছেন পায়ের চোটে। যে চোটটাই আজ প্রথম একাদশ থেকে তাকে ছিটকে দিয়েছে। সাবিনা খাতুনকে পাওয়া যায়া কিনা এনিয়েও কিছুটা আলোচনা ছিল। কারণ অসুস্থতার জন্য গতকাল অনুশীলন করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে শঙ্কা দূর করে সাবিনা শুরুর একাদশেই মাঠে নামেন এবং জোড়া গোল করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জোড়া পরিবর্তন আনে ভুটান। নামগেল ডেমা ও ডেকি হাজমকে তুলে ইয়াশি বিধা ও সুনিতা রাজকে মাঠে নামান। এই দুজনের যুগবন্দিতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। বা প্রান্ত দিয় ঢুকে বিধার নেওয়া শট রুপনা পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি। বল প্রায় চলে যাচ্চিল সুনিতার পায়ে। তবে তাকে শট নেওয়ার সুযোগ দেননি শামছুন্নাহার সিনিয়ার ও মাসুরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ভুটানের খেলার পরিবর্তনের ছাপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল। তবে ৫৮ মিনিটে তাদের হতাশ করে তহুরা হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৬-১ গোলে। সাবিনার থেকে বল পাওয়া মনিকা বুদ্ধিদিপ্ত শটে তহুরাকে খুঁজে নেন। আর সুযোগ সন্ধানি তহুরা বা পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন। প্রতিযোগিতায় এনিয় তার গোল দাঁড়াল ৫টি।
৬৩ মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাটলার। সাবিনার জায়গায় স্বপ্না রানী, ঋতুপর্ণার জায়গায় সানজিদা আক্তার ও সাগরিকার জায়গায় সাহেদা আক্তার রিপাকে মাঠে নামান। ৭২ মিনিটে বদলি নামা সানজিদার কর্নার থেকেই ডিফেন্ডার শিউলি আযীম হেডে জাল খুঁজে নেন। তাতে ৭-১ গোলের লিড পায় বাংলাদেশ।
৭৪ মিনিটে মাসুরার বদলি হিসেবে কোহাতি কিসকুকে মাঠে নামান বাংলাদেশ কোচ বাটলার। ৭৯ মিনিটে পঞ্চম পরিবর্তন আনেন তিনি। মারিয়াকে তুলে মাঠে নামান মাতসুশিমা সুমাইয়াকে। এর মধ্যে দিয়ে সুমাইয়ার সাফ ফুটবলে অভিষেক হয়। ৮৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়ার শটটা পোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেলে বঞ্চিত হন সুমাইয়া।
বাকি সময়ে আর কোনো দলই গোল পায়নি। বাংলাদেশ তাই ৭-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। হ্যাটট্রিক করে ম্যাচসেরা হয়েছেন তহুরা।